কাজ-কর্ম
কোভিড কেয়ারের পরিকল্পিত কাজ-কর্মের বাইরেও, গ্রামের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাচ্ছে ছোট-বড় ঘটনা, আকস্মিত ও স্বাভাবিক ভাবে। তার মধ্যের কিছু ছবি, যেগুলো অনেকটা গল্পের মত, আমাদের ও আপনাদের উদ্বুদ্ধ করতে পারে; আজকে, বা আগামী দিনে।
gramOsetu Crafts
gramOSetu Craft is to help local entities to promote their activities and products for globalization. Fundamentally it is a basic aggregator which gives a brand, quality assurance, legal and marketing advice to unorganized business entities. In addition, it can own series of products with independent capacity.
The Independence Day, 2021

মৃত্যুঞ্জয়
সেদিন জালে পড়লো এই এতবড় চন্দ্রবোড়া সাপ। সবাই বললো বিষাক্ত সাপ, দাও মেরে। কিন্তু সে বললো, না – “ছেলে টাকে ভালো কিছু শেখাতে হবে তো ।”
১৮ জুলাই, ২০২১.
মার্গ দর্শন করানোর জন্য লেখাপড়া ও ডিগ্রির দরকার হয় না। জীবনদর্শন থেকেই হতে পারে। শিক্ষা ও জ্ঞান দু’টো অদ্ভুত জিনিস। একটা আসে রপ্ত করে, আর একটা উপলব্ধি থেকে।
আমাদের ছোট গ্রাম জানবাড়, ছোট নদ- দামোদর। ৮৮ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংস গেছে আমাদের গ্রাম দিয়ে। চাষ বাস, নদী নালা এই জীবন ছেড়ে আমাদের অনেকে গ্রামের বাইরে পা বাড়ালেও, থেকে গেছে অবশিষ্ট। বর্ষা কালে বৃষ্টিতে এখনো ওঠে কৈ-মাছ, লোক ধরে। তাল পড়ে গাছ থেকে, লোকেরা কুড়োয়।
লোকেরা জাল পাতে, মাছ ধরে, খাল বেয়ে আসা মাছ।
জালে মাছের সাথে সাপ ও আসে অনেক সময়। বিষাক্ত সাপ হলে মেরে দেওয়াটা বিচিত্র নয়। খুব স্বভাবিক ও জীবনের অঙ্গ।
কাল একটু অন্যরকম হলো, তাই এই লেখা যেটা গল্পের মতো। তাই গল্প।
জালে সাপ পড়েছে। চন্দ্রবোড়া। গ্রামে বলে বোড়া সাপ। কেউটে আর এ প্রায় সমগোত্রীয় : ভয় ও জীবনহানীতে।
সবাই হৈ হৈ করে উঠলো, যথারীতি, মেরে দাও।
ওই লোকটা বেঁকে বসল। না, মারতে দেব না। বাঁচিয়ে রেখে তুলে দেব বনদপ্তরে।
এই রে! এমন কেউ করে? মৃত্যু কে বাঁচিয়ে রাখে? সবাই লাগলো পিছনে, একদিকে সে, আর অন্যদিকে বাকিরা। গ্রামের লোক, সবাই চিন্তায়।
সে কিন্তু অনড়। একটু হেসে একটা কথাই বলেছিল:
“ছেলে টাকে ভালো কিছু শেখাতে হবে তো😀”
হলো বনদপ্তরে ফোন। কোভিড কাল। কেউ নেই। পাওয়া গেল না কাউকে।
ভালো কাজও অনেকটা ছোঁয়াচে। তারই ভিতর একজন শুরু করলো এদিক ওদিক খোঁজ। এগিয়ে এলো একজন, বিজ্ঞানমঞ্চ-এর সাথে যুক্ত। এসে নিয়ে গেলো। বন দপ্তরের সাথে কথা বলে ছেড়ে আসবে দূরে- লোকালয় থেকে, যেখানে ভয় নেই। মানে মানুষের ভয় নেই সাপের থেকে ও সাপের ভয় নেই মানুষের থেকে।
ঘটনাচক্রে একদিন আগেই ১৬ই জুলাই, বিশ্ব সর্প দিবস।
গ্রামের লোকেরা সবাই এত শত জানে না, ওই যোগটা আমরা করেছি। নিশ্চই একেবারে কাকতলীয়।
তা সেই লোকটা কে? যে একাই সাপ ধরে তাকে বাঁচিয়ে রাখলো?
বিশ্বজিৎ হাজরা ( সকলের হারু কাকা, দাদা, মামা)
আমাদের শুভ (সী) আর তার বন্ধু চিত্রক প্রামানিক (বাগনান) সাপটাকে পৌছে দিল দূরের কোনো আবাসনে জঙ্গলে।
গল্পটা এখানেই শেষ হয়ে যেত পারতো, কিন্তু না। একটু উপসংহার ও আছে।
ব্যাপারটা সবাই কে মনে করিয়ে দিল, কিছু মৃত্যু বিগত দশকে, গ্রামেই। খুব বেশি না হলেও সাপের কামড়ে মৃত্যু এখনো হয়। ঝাড়-ফুঁক ই নয়, গ্রামীন হাসপাতালে এনটি-ভেনম ইনজেকশন ফ্রি তে অধিকার থাকলেও, তার উপলব্ধ টা বিরাট প্রশ্ন।
তাই ঠিক হলো, করা হবে ১০ টা AVS ভায়াল স্টক। দাম ৩০০ থেকে ১০০০ এক একটা ভায়াল। হোক না, হয়তো সময় লাগবে, লাগুক। থাকলো প্রতিশ্রুতি।
শেষ প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিয়েছিল ডাক্তার: জীবনের দাম বেশী না কি ১০ হাজার বেশী? কোনো উত্তর ছিল না গ্রুপে।






আত্মহত্যা:
তখন রাত ১২ টা। টুকটাক কাজ করে ফিরছিল ওরা। হঠাৎ দেখে, একজন বয়স্ক মহিলা রেল লাইনের পাশ দিয়ে যাচ্ছে… বেশ বয়স, প্রায় ৬০।
কে যায়, কে যায়?
সে তো থতমত। উদভ্রান্ত।
কোথায় যাও, এত রাত্তিরে?
১৭ জুলাই, ২০২১,
সে এক অদ্ভুত গল্প। এত বড় দেশে, এইসব ছোট ছোট কান্ড অনেক হয়। কিন্তু, মানুষ বেঁচে আছে, আর তাদের মন। মাপা কিসে হয়? মন মাপা যায়?
গল্পে আসি। তার আগে বলে দি, এতে আলাদা করে কোভিড কেয়ার নয়, তোমাদের গল্প। আর হলেই বা কি, কোভিড কেয়ার টাও তো তোমাদের ই তৈরি। সবাই ই তো আছো।
তখন রাত ১২ টা। টুকটাক কাজ করে ফিরছিল ওরা। হঠাৎ দেখে, একজন বয়স্ক মহিলা রেল লাইনের পাশ দিয়ে যাচ্ছে… বেশ বয়স, প্রায় ৬০।
কে যায়, কে যায়?
সে তো থতমত। উদভ্রান্ত।
কোথায় যাও, এত রাত্তিরে?
কোনো রকমে বলে, বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি, অনেক অশান্তি।
এই রকম উত্তরে একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়, ছেলেগুলো। জিজ্ঞেস করে, বাড়ি কোথায়?
শ্যামপুর।
আবার চমক। এতদূর, হেঁটে হেঁটে? প্রায় ৩০ কিলোমিটার?
হ্যাঁ।
কি করা যায়, কি করা যায়। শেষ মেষ পুলিশকেই ফোন করার কথা মনে হলো। কথা হলো। রাত্তির টা সামলে নাও, সকালে দেখা যাবে। এই রে? রাত্তিরে কোথায় থাকবে? কার বাড়ি? কে দেবে? এত সাত পাঁচ ভেবে, ওরা ভাবলো, চলো, দেখা যাক, বাড়িতেই পৌঁছে দেওয়া যাক।
রাত্তির হয়েছে, অনেক।
চারটে বাইক নিয়ে, ন’জন মিলে বুড়ি ঠাকুমাকে পৌছে দিলো শ্যামপুর।
অভাবের সংসার। ছেলে দেখে না। মেয়ের কাছেই থাকে, পাশেই বাড়ি। স্বামী বোধহয় পি ডব্লিউ ডি তে চাকরি করতো। এখন শয্যাশায়ী।
সংসারের জ্বালা। কাউকে বলাও যায় না। শোনার লোক ও নেই। আত্মহত্যাই বেশ।
আর কোনো উত্তর নেই।
রাত দু’টোয়, ছেলেগুলো ফিরে এলো, অনেকটা ভালো লাগা, একটুখানি খারাপ লাগা নিয়ে এই ভাবতে ভাবতে: ওরা কি কাউকে বাঁচলো, নাকি মৃত্যু টাকে একটু পিছালো? কি জানি।
যখন শুনলুম, আমারও একটা অদ্ভুত অনুভূতি হলো।
একদিকে সমাজের সামগ্রিক অবক্ষয়। যেটা বিশ্বরূপ সকালে মনে করিয়েছে, তার বাইরে ও কোভিড আমাদের অনেক কিছুই কেড়ে নিয়েছে। বেঁচে থাকার রসদ শেষ। মানসিক অশ্বাসন হারছে, পেটের টানে। কোনো উত্তর এলো না, ভিতর থেকে, না কোনো উপায়। একটা শূন্য দীর্ঘ্যশ্বাস: হাঃ।
সাথে সাথে আদ্ভুত ভালো লাগা: মানুষ নয়, তার সাথে বেঁচে আছে মনুষ্যত্বও, যেমন থাকা দরকার। হ্যাঁ, হয়তো ঢাক ঢোল পিটিয়ে নয়, চুপিসাড়ে। সকালের তাপু’দার দুঃখগুলো এক লহমায় ভেঙে গেল। হ্যাঁ, আমাদের ব্যক্ত করার ভাষা আলাদা – আলাদা।
না, নাটক করে আলাদা করে ওদের হিরো বা নায়ক বলবো না, কারণ আমার মনে হয়, আমাদের গ্রামের সবাই এমন।
তাও, তোমরা যারা জানো না, বা জানবে না, তাদের বলে দি:
বিল্টু,অনুপম,মধু,বুম্বা,সুপ্রিয়,অবিনাশ,গোবিন্দ,জয়ন্ত,সৌমিত্র (হাজরা)। সবাই চেনো, না ডাকনাম গুলো ও বলতে হবে?