ইতিহাস ও ভূগোল
সময়ের সাথে সাথে ইতিহাস বা ভূগোলের আপেক্ষিক অবলুপ্তি ঘটে। তাই প্রচেষ্টা এইটার সংরক্ষণ।
প্রথাগত ভাবে না হলেও, আমরা চেষ্টা করবো, ব্যক্তি বিশেষের ভাষাতে এই ছবিটা বাঁচিয়ে রাখতে।
জানবাড়ে গোরা সৈন্য।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রসাদপুর মৌজাকে বৃটিশ সরকার দখল করে। গ্রামের অনেক মানুষ কে ঘর ছেড়ে চলে যেতে হয় …
show moreshow lessদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রসাদপুর মৌজাকে বৃটিশ সরকার দখল করে। গ্রামের অনেক মানুষ কে ঘর ছেড়ে চলে যেতে হয় । চাষ-বাস করা যাবে না নোটিশ জারি হলো । তবে ফসলের ক্ষতি পূরণ বাবদ কিছু টাকা দিয়েছিল । দেড়শ- দুশ গোরা সৈন্যের ক্যাম্প তৈরি হলো । প্রচুর গাড়ী যাতায়াত করতো । সে এক দারুণ হৈ হৈ ব্যাপার । গোরা সৈন্য রা ছিল খুব বেপরোয়া । মেয়েদের দেখলে অশ্লীল ইঙ্গিত করতো । একদিন হয়েছে কি , দুজন গোরা সৈন্য জানবাড় গ্রাম এর ধীবর পল্লী তে ঢুকে পড়ে, দুই টি রমনীকে হাত ধরে টানাটানি করে । তখন ধীবর পল্লী র মানুষ তাদের দুজনকে ভীষণ ভাবে আক্রমণ করলে একজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় ।অন্যজন ঘটনার জায়গায় প্রাণ হারায় । এঘটনা ঘটে যাওয়া র পর গ্রাম বাসীরা বাড়ি ঘর ছেড়ে ভয়ে পালিয়ে যেতে থাকে । সেই সময় উলুবেড়িয়া মহকুমা র এস ডি ও ছিলেন এন জি রায় । তিনি এই সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসেন । সৈন্য প্রধান এর সঙ্গে কথা বার্তা বলেন । অপর স্থানীয় নেতারা ও হাজির হয়ে যান । তাদের মধ্যে অন্যতম উচ্চ শিক্ষিত বিদ্যোৎসাহী যতীনদরনাথ ঘোষ , বনমালী ঘোষ , চণডীপুর ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট গোপাল দত্ত প্রভৃতির মধ্যসথতায় জানবাড় গ্রাম এর পলাতক বাসিন্দা রা ফিরে আসে না ।
১০ ই জুলাই, ২০২১, পার্থ মাইতি । কৃতজ্ঞতা স্বীকার : ‘কুলগাছিয়ার ইতিকথা’ , লেখক আমার ই বন্ধু স্থানীয় শ্রী চিত্ত মিশ্র ।
এরমধ্যে একজন ছিলেন , যিনি দোভাষীর কাজ করেছিলেন । ইংরেজি তে তুখোড় । তিনি নরেন্দ্র নাথ মাইতি । আমার ঠাকুরদা দা ।
স্বাধীনতা সংগ্রামী বনমালী ঘোষ ( ১৯১২_১৯৮৭ )
প্রথম ক্যাম্প তৈরি হলো বর্তমান শ্রী কৃষ্ণ পুর হাইস্কুলের কাছে । এই ক্যাম্পের একটি উদ্দেশ্য ছিল…
show moreshow lessপ্রথম ক্যাম্প তৈরি হলো বর্তমান শ্রী কৃষ্ণ পুর হাইস্কুলের কাছে । এই ক্যাম্পের একটি উদ্দেশ্য ছিল । সে কথা য় পরে আসছি । তিন মাসের কারাদণ্ড এর পরে ফিরে এসে দেখেন, পুলিশ ক্যাম্পটিকে ভেঙে দিয়েছে । তখন তিনি শ্রী কৃষ্ণ পুরে র শ্মশান ভূমি র ধারে ক্যাম্প তৈরি করে ন । এই ক্যাম্প তৈরি করা র জন্য গুরুসদয় দত্ত মহাশয় সাহায্য করেছিলেন । আসল উদ্দেশ্য এই শিবির এ হরিজন দের শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা হলো । অবৈতনিক শিক্ষক নিযুক্ত হলেন গদাধর ঘোষ । উদ্বোধন করলেন সতীশ চন্দ্র দাশগুপ্ত ।
এই ভাবে ই বনমালী ক্যামপ্ । এবং তিনি অকৃতদার ছিলেন । দেশের জন্য সারা জীবন প্রাণ পাত করেছিলেন ।
গান্ধী ছিল স্মৃতি হিসেবে একটি বিছানার চাদর , বাটি, লাঠি ও আরো কিছু জিনিস তাঁর নিজের কাছে ছিল । ছিল অনেক ফটোগ্রাফ, তাও হারিয়ে গেছে । কয়েকটি অবশিষ্ট আছে । নিজের হাতে চরকায় সুতো কেটে সেই সুতো র বস্ত্র পরতেন আমৃত্যু কাল ।
১২ ই জুলাই, ২০২১, পার্থ মাইতি ।
মেদিনীপুর ক্যানেল
তখন ট্রেন এর লাইন বসেনি । সে জন্য উলুবেড়িয়া থেকে মেদিনীপুর পর্যন্ত জলপথে যাতায়াত এর উদ্দেশ্যে ১৮৬০ সালে ইংরেজ সরকার এক খাল খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং ইজারা দেয় ইস্ট ইন্ডিয়া ইরিগেশন অ্যানড ক্যানেল কোম্পানি নামে এক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে ।
show moreshow lessতখন ট্রেন এর লাইন বসেনি । সে জন্য উলুবেড়িয়া থেকে মেদিনীপুর পর্যন্ত জলপথে যাতায়াত এর উদ্দেশ্যে ১৮৬০ সালে ইংরেজ সরকার এক খাল খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং ইজারা দেয় ইস্ট ইন্ডিয়া ইরিগেশন অ্যানড ক্যানেল কোম্পানি নামে এক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে ।
খাল কাটা র কাজ শুরু হয়েছিল ১৮৬০ সাল নাগাদ এবং নির্মাণ শেষে পরিবহনের জন্য জলপথটি খুলে দেওয়া হলো ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে । উলুবেড়িয়া র পূর্ব – পশ্চিম এ বিস্তৃত এই খালটি ভাগীরথী থেকে শুরু হয়ে দামোদর এর তীরে প্রসাদ পুর পেরিয়ে কুলতেপাড়া হয়ে কাঁটা পুকুরে র কাছে রূপ নারায়ণ নদ পেরিয়ে দেনান ; তারপর সেখান থেকে সোজা মেদিনীপুর টাউনে র কাছে মোহনপুরে কাঁসা ই নদী তে এই খালটির শেষ সংযোগ । সমস্ত নদী মুখ গুলোতে বসানো হয় স্লুইসগেট । জলপথের নাম করণ করা হয় মেদিনীপুর টাইড্যাল ক্যানেল , যা পরিশেষে চলতি কথায় মেদিনীপুর ক্যানেল ।
কিন্তু জলপথে পরিবহনের আয়ু বেশীদিন টিকে থাকেনি । হাওড়ার কাঁটা পুকুরে র কাছে রূপ নারায়ণ এর চড়া পড়তে শুরু করায় ক্যানেলের মুখ বুজে যেতে শুরু করে । জলযানের পক্ষে এই খাল দিয়ে যাতায়াতের অসুবিধা দেখা দেয় । কলকাতা র দিক থেকে নৌকা আসা কমতে শুরু করায় টোল আদায় এ ঘাটতি পড়ে । সরকার তবু শেষ চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে জলপথটি কে সবরকম এ নাব্য রাখার জন্য । কিন্তু অন্য দিকে ১৯০০ সাল নাগাদ বাদ সেধেছে বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ে কোম্পানি তাদের রেলপথ বসিয়ে । ফলে ১৯০৫ সাল নাগাদ রেলপথ এ গাড়ী চলাচল এর দরুণ জলপথে পরিবহনের এই ভাবে ই ইতি হয়ে যায় । শুধু পড়ে থাকল দীর্ঘ এই পরিবহন খালটির এক কঙ্কাল , যা বর্ষায় স্ফীত হয়, অন্য সময় প্রায় শুকিয়ে যায় ।মেদিনীপুর ক্যানেল নির্মাণ এর সঙ্গে উলুবেড়িয়া র বিরাট একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল । ইতিপূর্বে ১৮৬০ সাল নাগাদ ওড়িশা ট্রাঙ্ক রোড নির্মাণ এর পর জলপথে কলকাতা র সঙ্গে স্টিমারে যোগসূত্র স্থাপন হয়েছে উলুবেড়িয়া র সঙ্গে । আর্মেনিয়ান ঘাট থেকে স্টিমার ছাড়ছে ক্যালকাটা স্টিম নেভিগেশন কোম্পানি র পক্ষে ম্যানেজিঙ এজেন্ট স হোর মিলার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা য় । সূতরাঙ এই জলপথ নির্মাণ এর সঙ্গে সঙ্গে যাতায়াতের সুবিধার্থে ১৮৮৩ সালে দামোদর তীরবর্তী মহিষরেখায় স্থাপিত সাবডিভিশন অফিস টি উঠে এলো উলুবেড়িয়া য় ।
মহিষরেখা ছেড়ে উলুবেড়িয়া অতঃপর জমজমাট হয়ে উঠেছে । কোর্ট- কাছারি স্থাপন হয়েছে, নানা স্থান থেকে আসা উকিল মোক্তার ও অন্যান্য সরকারি কর্মচারী রা এখানে নতুন করে বসতি স্থাপন করলেন । কলকাতা র সঙ্গে জলপথে যাতায়াত তদুপরি কটক রোড ও মেদিনীপুর খাল সহযোগে পরিবহনের দৌলতে এখানে হাট বাজার ও বাণিজ্য এর প্রসার ঘটে ছে ।
তথ্য সূত্র: তারাপদ সাঁতরা । বনানী পত্রিকা । সম্পাদক অধীরকৃষ্ণ মন্ডল ।
১৩ ই জুলাই, ২০২১, পার্থ মাইতি ।